ফেউ শব্দের আভিধানিক অর্থ শৃগাল বা অন্যভাবে বললে বাঘের পেছন থেকে ডেকে ডেকে বাঘের আগমন জানিয়ে দেয় এমন শৃগাল। চালাক প্রকৃতির, অনুসরণকারী হিসেবেও ফেউ–এর ব্যবহার দেখা যায়। ফেউলাগা মানে কারও পেছনে লেগে তাকে ক্রমাগত উত্ত্যক্ত বা বিরক্ত করা।
চরকি অরিজিনাল সিরিজ ‘ফেউ’ নামকরণের ওপরের সব কটি দ্যোতনাই নিহিত। ১৬ জানুয়ারি বিকেলে চরকির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশ পেয়েছে ‘ফেউ’র টিজার। যেখানে একটি সংলাপে শোনা যায়, ‘ও সুনীলদা, ফেউ কারা?’ উত্তরে শোনা যায়, ‘এজেন্ট। সরকারি গোয়েন্দা–গে এজেন্ট কয়।
‘ফেউ’র নির্মাতা সুকর্ন সাহেদ ধীমান বলেন, ‘পুরো গল্পেই “ফেউ” শব্দটার উপস্থিতি আছে। গল্পের রাজনৈতিক বর্ণনাতেও “ফেউ” প্রাসঙ্গিক। মানুষের স্বভাবজাত আতঙ্ক, ভয় যখন দৈনন্দিন হয়ে যায়, তখনো সেটা ফেউ শব্দ দিয়ে বোঝানো সম্ভব। এই আতঙ্কের মধ্যে বসবাস এবং উতরে যাওয়ার গল্প নিয়ে ‘ফেউ’ সিরিজ। তাই সিরিজের নামকরণ ‘ফেউ’ সবচেয়ে যৌক্তিক মনে হয়েছে।’
‘ফেউ’র টিজার প্রকাশের মধ্য দিয়ে এর অভিনয়শিল্পী এবং মুক্তির তারিখও ঘোষণা করা হয়েছে। সিরিজটি চরকিতে আসছে ২৯ জানুয়ারি রাত ১২টা ১ মিনিটে (৩০ জানুয়ারি)। আর এতে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান, চঞ্চল চৌধুরী, মোস্তাফিজুর নূর ইমরান, তানভীর অপূর্ব, হোসেন জীবন, তাহমিনা অথৈ, রিজভি রিজু, ফাদার জোয়া, বাবলু বোস, এ কে আজাদ সেতু।
সিরিজে কাজি চরিত্রে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান। চরিত্র নিয়ে তিনি বলেন, ‘কাজি চরিত্রটি এই এলাকায় প্রভাবশালী মানুষ। রাজনীতির সঙ্গে সে খুব বেশিভাবে জড়িত। সব জায়গায় তার কর্তৃত্ব আছে কিন্তু সেটা সে বোঝাতে চায় না। এর মধ্য দিয়ে ওই এলাকার রাজনীতি বেশ ভালোভাবে উঠে এসেছে বলে আমার মনে হয়।’
তারিক আনাম খান জানান, খুলনা অঞ্চলে তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা কিন্তু তিনি কখনো সুন্দরবন দেখেননি। এবারই প্রথম তিনি সুন্দরবনের একদম ভেতরে গিয়ে শুটিং করেছেন। অভিনেতা বলেন, ‘আমার এলাকা, এ জন্য ভাষার ব্যবহারেও আমার খুব আরাম লেগেছে। কিছু বিষয় কানে লেগে আছে। আমাকে দেখে অনেকে বলেছে, “উরে বাবারে আপনারে এত দিন পরে দেখলাম, সেই ছোটবেলায় দিখিছি। টেলিভিশনে দেখতি যাতাম পাঁচ মাইল দূরি। উরি আল্লাহ এ কি দেখতিছি, আপনারে একটু ছুঁয়ে দেখি।” সাধারণ ভাষায় হৃদয়ের কথা বলে দিল, খুব ভালো লেগেছে আমার।’
চঞ্চল চৌধুরী অভিনয় করেছেন সুনীল চরিত্রে। সিরিজে তিনি একজন আলোকচিত্রী। ‘ফেউ’তে ইতিাসের একটা ছায়া রয়েছে, প্রেক্ষাপট রয়েছে। সেই ঘটনাগুলোর অনেক তথ্য সুনীল তার ক্যামেরায় ধরে রাখে বলে জানান চঞ্চল চৌধুরী।
চঞ্চল চৌধুরী তাঁর শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘আমরা যখন শুটিং করেছি, তখন ছিল প্রচণ্ড ঠান্ডা। মাসখানেক সুন্দরবনে শুটিং হয়েছে, যার মধ্যে আমি ছিলাম ২০ দিনের বেশি। রাতে যখন লঞ্চে ঘুমাতাম, খুব ঠান্ডা লাগত। আমি শীতের জামাকাপড় পরেই ঘুমাতাম। তবে ঠান্ডার চেয়েও ভয়ের বিষয় ছিল কুমির। আমাদের লঞ্চ যেখানে নোঙর করা ছিল, সেখানে ছিল কুমিরটা। সকালে জানালা দিয়ে মুখ বের করলেই কুমিরসহ বিভিন্ন পশুপাখি দেখা যেত। আমরা লঞ্চ থেকে শুটিং স্পটে যেতাম ছোট ছোট ট্রলারে। রাতেও শুটিং করতে হতো। খুব কঠিন পরিস্থিতি ছিল।’
মার্শাল চরিত্রে একদম অন্য রকম একটা লুকে অভিনয় করেছেন মোস্তাফিজুর নূর ইমরান। চরিত্রটি ও সিরিজের জন্য দেড় বছর সময় নিয়েছেন তিনি। বলেন, ‘পরিচালক যখন এই গল্প এবং মার্শাল চরিত্রটা শোনায়, তখন এতটাই উচ্ছ্বসিত ছিলাম যে চরিত্র অনুযায়ী প্রস্তুত হতে কতটা সময় লাগবে বা কী হবে, সেসব মনেই আসেনি বা ভাবিনি। কাজটা সুন্দরবনে হয়েছে। সেখানকার একটা চরিত্রের শারীরিক ভাষা, দর্শন, আরও ডিটেইল কীভাবে করা যায়, সেগুলোর প্রস্তুতি নিয়েছি। চুল–দাড়ি বড় করতে হয়েছিল।
এটা তো দেখা যায় কিন্তু ভেতরে একরকম প্রস্তুতি নিতে হয় যেটা দেখা যায় না।’ নূর ইমরান জানান, ‘ফেউ’র শুটিং–অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। সুন্দরবনের এমন সব জায়গায় কাজ করতে হয়েছে, যেখানে কখনো শুটিং হয়নি। ওসব জায়গা আমাদের শুটিং উপযোগী করতে হয়েছে।’
১৯৭৯ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাসে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ পরগনা জেলার দ্বীপ মরিচঝাঁপিতে ঘটে যাওয়া গণহত্যার ছায়া অবলম্বনে ‘ফেউ’ নির্মিত হলেও সিরিজটি ফিকশনাল। এর গল্প লিখেছেন সুকর্ন সাহেদ ধীমান, রোমেল রহমান এবং চিত্রনাট্য করেছেন সুকর্ন সাহেদ ধীমান, সিদ্দিক আহমেদ। ইতিহাসের সঙ্গে নিজের দেখা চরিত্র, নিজের জানা ঘটনা, নিজের অঞ্চলের গল্প সিরিজে তুলে ধরেছেন বলে জানান নির্মাতা।
Post a Comment