একের পর এক অনুষ্ঠান স্থগিতে তারকাদের ক্ষোভ

একের পর এক অনুষ্ঠান স্থগিতে তারকাদের ক্ষোভ


অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী চট্টগ্রামে শোরুম উদ্বোধন করতে গিয়ে পারেননি। সেখানে তিনি বাধার মুখে পড়েন ‘তৌহিদী জনতা’ নামে এক সংগঠনের। একই ঘটনা ঘটেছে চিত্রনায়িকা শামসুন্নাহার স্মৃতি পরীমণির ক্ষেত্রে, টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে। ‘জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ’ এবং হেফাজতে ইসলামের টাঙ্গাইল ও কালিহাতী শাখার আপত্তিতে শেষ পর্যন্ত শোরুম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যাননি এ নায়িকা। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দেন পরীমণি। একের পর এক অনুষ্ঠান ঘিরে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে ক্ষোভ জানিয়েছেন তারকারাও।


এদিকে আবাসন ব্যবসায়ী জাতীয় পার্টির নেতা নাসির উদ্দিন মাহমুদের মামলায় গতকাল রোববার পরীমণি ও তাঁর কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ বোগদাদী জিমির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

শুনানিতে হাজির না থাকায় দু’জনের বিরুদ্ধেই  গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জুনাইদ মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ২০ মার্চ দিন ধার্য করেছেন।

পরে পরীমণি সমকালকে বলেন, ‘প্রতিবাদ করার জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে তা কষ্টকর। মানুষ কথা বলা ছাড়া কীভাবে থাকবে? যে চুপ থাকতে চায়, সে থাকুক। কিন্তু যে বলতে চায়, তাকে তো বলতে দিতে হবে। তবে এটি যেহেতু আদালতের বিষয়, আমিও আইনি প্রক্রিয়ায় হাঁটব। বিষয়টি আমার আইনজীবীরা দেখবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘হয়তো আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে চুপ থাকতেন। কিন্তু আমি চুপ থাকতে পারি না। আমি চুপ থাকার মেয়ে না; যা সত্যি, তা তো বলতেই হবে। এটি তো আমার দেশ, আমার ইন্ডাস্ট্রি। নিজের দেশে কেন নিরাপদে কাজ করতে পারব না?’

পরীমণির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী সমকালকে জানান, সোমবার বেলা ১১টার দিকে সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইবেন পরীমণি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অসুস্থ থাকায় পরীমণি রোববার আদালতে হাজির হতে পারেননি।’

বাদীপক্ষের আইনজীবী এ কে এম সোহেল সাংবাদিকদের জানান, পরীমণিসহ দু’জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ৩২৩ ও ৫০৬ ধারায় চার্জ গঠন হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদণ্ড হতে পারে।


সোচ্চার চলচ্চিত্রাঙ্গন

শোরুম উদ্বোধনে যেতে না পেরে প্রতিবাদের পরদিনই পরীমণির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ভালোভাবে নিচ্ছে না চলচ্চিত্রাঙ্গনের অনেকে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন। বলেছেন, এভাবে সংস্কৃতিকর্মীরা বাধার মুখে পড়লে পুরো অঙ্গন সংকুচিত হয়ে পড়বে। বাধা ন্যক্কারজনক আখ্যা দিয়ে অভিনেতা সোহেল রানা বলেন, ‘তারা সাহস কীভাবে পেলেন? দেশ তো হাওয়ার ওপর চলছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতে হবে। সংস্কৃতি জগৎ দেশের অন্যতম মূল্যবান জায়গা। এটি আটকে দিলে দেশ অন্ধকারে হারিয়ে যাবে।’

নির্মাতা আশফাক নিপুণ ফেসবুকে লেখেন, মবের প্রতিবাদের মুখে পরীমণির দোকান উদ্বোধন করতে না পারার ক্ষোভ উদগীরণের পরপরই তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের পুরোনো মামলায় হাজিরা দিতে না যাওয়ায় গ্রেপ্তারের আদেশ বড়ই কাকতালীয়, সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারকে মব প্রতিহতে কঠোর হতেও বলেন তিনি। নিপুণ আরও লেখেন, পর পর বেশ কয়েকটি ঘটনা আমাদের চোখে পড়ল। সংস্কৃতি অঙ্গনের কর্মীরা কেন তাদের কাজের ক্ষেত্রে বাধার মুখে পড়বেন? এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সরকারের কাছে আরজি, কাজের সরকার হন, মব ঠেকান। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের কুশীলবদের ধরার ব্যবস্থা করেন।

অভিনেত্রী কাজী নওশাবা বলেছেন, মেহজাবীন, পরীমণি, এর পর? আমরা চুপ। শিল্প, সংস্কৃতি একটি জাতির ধারক। এখানে হাত দিলে এবং যারা হাত লাগাতে সাহস দিচ্ছেন, তারা নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনছেন। সত্তাকে বিকিয়ে বেশি দূর এগোনো যায় না। তিনি মনে করেন, এভাবে চলতে থাকলে আমাদের সংস্কৃতি চর্চার জায়গাও সংক্ষিপ্ত এবং দেশে অন্ধকার নেমে আসবে। তাই দ্রুত এসবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

Post a Comment

أحدث أقدم