||
হাওয়া সিনেমার রিভিউ | Hawa Movie Review

সর্বশেষঃ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

হাওয়া সিনেমার রিভিউ | Hawa Movie Review



রিভিউঃ হাওয়া সিনেমা (স্পয়লার বিহীন) 

প্রতীক্ষার অবসান ঘটলো, 'হাওয়া' দেখলাম সনি স্কয়ারে প্রথম শো তে। 

টেকনিক্যাল বিষয়ের দিকে নজর দিলে 'হাওয়া' গত এক দশকের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র নিঃসন্দেহে। চোখ জুড়ানো প্রতিটা ফ্রেম, হৃদয় শীতল করে দেওয়া ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, একঝাঁক জাত অভিনেতার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স, নির্মাতার দক্ষ নির্মাণশৈলী সবকিছু মিলিয়ে 'হাওয়া' অত্যাধিক বার উপভোগ করার প্যাকেজ বলা চলে৷ 

লোভ-লালসা, রাগ-ক্ষোভ, মায়া-মহব্বত, চাহনা-কামনা, ঝগড়া-বিবাদ, হিংসা-বিদ্বেষ সবকিছুই দেখা মিলে নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমনের মিস্ট্রি ড্রামা ঘরানার সিনেমায়। 'হাওয়া' স্লো-বার্ন সিনেমা হয়েও চমকপ্রদ বিষয়টা হচ্ছে সিনেমাটি কোথাও খেই হারায়নি। পুরোটা সময় জুড়েই টানটান উত্তেজনাটা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে দুই ঘন্টা দশ মিনিট ব্যাপ্তির সিনেমাটি।

গল্পে কোন জটিলতা নেই। সহজসরল সাদামাটা গল্প। তবে গল্প জুড়ে ভীষণ মেটাফোর আছে। নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন খুবই সূক্ষ্ম ভাবে গল্পটাকে নিজস্ব স্টাইলে 

মেটারফোরিক ভঙ্গিমায় উপস্থাপন করেছেন। যা এক শ্রেণীর দর্শকদের জন্য খানিকটা অস্বস্তিকর অনুভূতি। 

নৌকার নাম 'নয়নতারা'। নৌকায় আট পুরুষের বসবাস। উত্তাল সমুদ্রের মাঝেই তাদের জীবনযাপন। নৌকায় কারো দায়িত্ব ইঞ্জিন রুমে, কারো আবার চুলার ধারে, কারো আবার জাল ফেলায়, কেউবা আবার বরফ ঘরে। নৌকার সর্দার চঞ্চল চৌধুরী যাকে পর্দায় দেখা যায় 'চান মাঝি' রূপে। সচরাচর একজন জাইলার জীবন যে গতিতে এগিয়ে চলে তাই দেখা যায় পর্দায়। কিন্তু গল্পের মোর ঘুরে যায় যখন মাছের জালে আটকে পড়ে এক নারী। নৌকার সকলেই ভাবে মৃত কন্যা। কিন্তু এটা আস্ত একটা জ্যান্ত মাইয়া মানুষ। 

অভিনয়ের দিক দিয়ে বলতে হয় একদম আগুন জড়ানো অভিনয় দেখলাম বেশ কয়েকজন অভিনয়শিল্পীর। চঞ্চল চৌধুরীর দিকে যখনই ফ্রেম গিয়েছে বলা যায় চোখ সরানো যায়নি। আমারে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে নাসির উদ্দিন খান। 'নাগু' রূপে নাসির বদ্দা যে অভিনয় দেখালেন তা মনে থাকবে বহুদিন। 'পরাণ' সিনেমার পর শরিফুল রাজ আবারও ফাটালেন বলা চলে অভিনয় দিয়ে। 'গুলতি' রূপে নাজিফা তুষি এককথায় অনবদ্য। চোখের চাহনি দিয়েই পুরোটা সময় অভিনয় করে গিয়েছেন। সিনেমায় সংলাপ ছিল খুবই কম কিন্তু যখন সংলাপ ডেলিভারি করেছে এককথায় পারফেক্ট। সুমন আনোয়ার নেতিবাচক চরিত্রে বেশ ভালো পারফর্ম করেছেন। চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন বলতে হয়। সোহেল মন্ডল ও রিজভী রিভুর জুটিকে বেশ লেগেছে তবে ভাইসা খ্যাত অভিনেতার কাছ থেকে আরেকটু আশা ছিল। তার স্ক্রিন টাইম তুলনামূলক কম ছিল তাই হয়তো নিজের স্টাইলে অভিনয়টা করে দেখাতে পারেননি। 'উরকেস' আর 'পারকেস' চরিত্রটা আরেকটু ডেভলপ করলে মন্দ হতো না। বাবলু বোস ও মাহমুদ আলম তাদের দুজনের চরিত্রটা বেশ প্রভাব ফেলতে পারেনি সিনেমা জুড়ে। ওভারঅল সকলের অভিনয় দেখে হতাশ হওয়ার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। 

সিনেমায় সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে সিনেমাটোগ্রাফি ও বিজিএম। কামরুল হাসান খসরু সিনেমার প্রতিটি ফ্রেমকে ক্লাসিক ওয়ালপেপারের রূপান্তরিত করেছেন। ক্যামেরা হাতে কামরুল হাসান খসরুর নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমনের সঙ্গে জুটি বেঁধে যে নানন্দিক কাজ উপহার দিলেন তা দর্শক মনে রাখবে বহুবছর। যেকোনো রুচির দর্শককে মুগ্ধ করবে ক্যামেরার কাজ। চোখ জুড়ানো কালার গ্রেডিং দেখা গিয়েছে সিনেমা জুড়ে। রাশিদ শরীফ শোয়েব ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে যে খেল দেখালেন তা শুনে তৃপ্ত না হওয়ার সুযোগ নেই। রহস্যময় আবহ সংগীত পুরোটা সময় জুড়ে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। ফোক ঘরানার দুটো গান শুনে দর্শক তো সিট থেকে উঠে নাচ শুরু করে দিয়েছে। 

সিনেমার গান ও ভিন্ন ধর্মী প্রচরণার কৌশল অবলম্বন করার ফলে 'হাওয়া' ম্যাস পিপলের সিনেমায় রূপান্তরিত হয়। সেহেতু মিশ্র প্রতিক্রিয়া আসছে সিনেমা দেখার পরে প্রতিক্রিয়া লেখার সময়। নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমনের নির্মাণের সঙ্গে যারা পরিচিত এবং গল্প বলার ধরণ সম্পর্কে জানাশোনা রয়েছে তাদের 'হাওয়া' হতাশ করবে না।

এ হাওয়া, আমায় নেবে কত দূরে? যা 'এ হাওয়া' শিরোনামের গানের লিরিক। যা 'হাওয়া' সিনেমার প্রমোশনাল সং হিসেবে নির্মাণ করেছেন মেঘদল ব্যান্ড। গানের সুরে যদি বলতে হয় হাওয়া কতদূর নেবে জানিনা তবে সিনেমা হল থেকে বের হওয়ার পর আপনার ভাবনার জগত বহুদূরে নিয়ে যাবে নিশ্চয়ই।



-রেডিও শহর ডেস্ক 

Post a Comment

0 Comments

Radio Shohor LIVE

Live Segment

Posted by RADIO SHOHOR LIVE on Wednesday, 15 September 2021