-রেডিও শহর ডেস্ক
বরেণ্য অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদ এর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি....…
===================================================
বরেণ্য অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদ আজ (৮ জুলাই ২০২২) সকালে রাজধানীর উত্তরায় তাঁর নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন....। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন....।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। প্রয়াত এই গুণী অভিনেত্রীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
শর্মিলী আহমেদ (মাজেদা মল্লিক) ১৯৪৭ সালের ৮ মে, মুর্শিদাবাদের বেলুর চাক গ্রামে, জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি রাজশাহী পিএন গার্লস হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, এম এ (বাংলা) পাস করেন। তাঁর স্বামী রকিবউদ্দিন আহমেদ ছিলেন তেজগাঁও পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট এর ভাইস প্রিন্সিপাল। পরবর্তীতে শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক হন। রকিব উদ্দিন আহমেদ 'রুপকার' ছদ্মনামে দুটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। বিশিষ্ট অভিনেত্রী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ওয়াহিদা মল্লিক জলি, শর্মিলী আহমেদের ছোট বোন । তাঁর একমাত্র মেয়ে তনিমা আহমেদ এক সময় টেলিভিশনে জনপ্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন।
ছোটবেলা থেকেই শর্মিলী আহমেদ এর অভিনয় জীবন শুরু হয়। স্কুল ও পাড়ার বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
১৯৬২ সালে, রাজশাহী বেতার-এ প্রথম অভিনয় শুরু করেন তিনি। পরবর্তিতে চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনে আসেন।
শর্মিলী আহমেদ অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র 'ঠিকানা' মুক্তি পায়নি। তাঁর অভিনীত অন্যান্য ছবি- আয়না ও অবশিষ্ট, আবির্ভাব, সুয়োরাণী দুয়োরাণী, পানছি বাওড়া, পলাতক, আলিঙ্গন, রূপালী সৈকতে, আগুন, বসুন্ধরা, আরাধনা, আশার আলো, এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী, রাই বিনোদিনী, নির্দোষ, হিসাব নিকাশ, প্রেমিক, দুই নয়ন, সুদ আসল, দহন, ডানপিটে ছেলে, স্বর্গ নরক, নিয়তর খেলা, নির্যাতন, হুশিয়ার, মিলন তারা, সংসার সীমান্তে, আদর্শবান, আবিষ্কার, জিজ্ঞাসা, ভালবাসা ভালবাসা, আকর্ষন, লাল গোলাপ, কুসুম কলি, লটারি, স্ত্রীর পাওনা, ঘেরাও ক্ষমতাবান, প্রেমের প্রতিদান, গরম হাওয়া, বেনাম বাদশা, অঞ্জলি, আবদার, ত্যাগ, চাঁদের হাসি, মহৎ, বিক্ষোভ, প্রেমযুদ্ধ, শেষ খেলা, প্রিয় তুমি, তোমাকে চাই, গরীবের রাণী, আত্মত্যাগ, কবুল, উত্তর ফাল্গুনী, বাঁচার লড়াই, বেঈমানি, সুখের ঘরে দুখের আগুন, কত যে আপন, এখনও অনেক রাত, হাঙর নদী গ্রেনেড, কাজের মেয়ে, আমি তোমারি, সবার অজান্তে, চুপিচুপি, ধাওয়া, মিলন হবে কত দিনে, স্বামী ছিনতাই, মাটির ফুল, মহব্বত জিন্দাবাদ, না বোলনা, চাচ্চু, দুঃখিনী জোহরা, ঝন্টু মন্টু দুই ভাই, জজের রায়ে ফাঁসি, স্বামী নিয়ে যুদ্ধ, আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা, টিপ টিপ বৃষ্টি, গোলাপী এখন বিলাতে, মনের জ্বালা, মেহেরজান, মাটির ঠিকানা, আকাশ কত দূরে, সে আমার মন কেড়েছে, অচেনা হৃদয়, স্বর্গ থেকে নরক, এক পৃথিবী প্রেম, প্রভৃতি।
শর্মিলী আহমেদ 'দহন' ছবিতে অভিনয় করে, ১৯৮৫ সালে
বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার পান, পার্শচরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে।
বহু টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছেন শর্মিলী আহমেদ।
টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের খুবই জনপ্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন তিনি। অভিনয় জীবনে টিভি ও চলচ্চিত্রের বৈচিত্র্যপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করে গেছেন । সুন্দর-সাবলীল অভিনয়ের মাধ্যমে সহজেই জিতে নিয়েছেন দর্শকের মন। সব মাধ্যমে অভিনয় করে খ্যাতিমান হয়েছেন এই গুণী অভিনেত্রী।
শর্মিলী আহমেদ ক্যারিয়ারের শুরুতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় শুরু করলেও, একসময় চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবেই ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী হয়ে ওঠেন। ভাবী, মা কিংবা দাদীর চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের মনে শক্ত অবস্থান তৈরি করে নেন। বিশেষ করে, মমতাময়ী মায়ের চরিত্রে অসংখ্য চলচ্চিত্রে তিনি দাপটের সাথে অভিনয় করেছেন। একজন স্নেহময়ী জননী হিসেবে চলচ্চিত্রের পর্দায় তাঁর মুখ সর্বদাই উজ্জ্বল । আদর্শ মায়ের চরিত্রে সাবলীল অভিনয় দক্ষতায়, দর্শক-শ্রোতাদের আবেগে আপ্লুত করেছেন।
চলচ্চিত্র তথা শিল্প-সংস্কৃতির লোকদের কাছে, একজন ভালো মনের মানুষ হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন শর্মিলী আহমেদ। তাঁর এই চিরবিদায়ের ক্ষণে, তাঁর প্রতি অসিম ভালেবাসা-শ্রদ্ধাঞ্জলি ~
ডেস্ক রিপোর্ট
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন