আরও একজন ভয়ংকর যুদ্ধ অপরাধী গ্রেফতার

আরও একজন ভয়ংকর যুদ্ধ অপরাধী গ্রেফতার


-রেডিও শহর ডেস্ক
 

গতরাতে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া এই লোকটির‌ নাম রজব আলী।  মুক্তিযুদ্ধের কুখ্যাত নরঘাতক, সাক্ষাৎ নরপিশাচ রজব আলী।‌ 

.

এই রজব আলী যে কতোটা ভয়ঙ্কর আর‌ র'ক্তপিপাসু ছিলো তা হাড়ে হাড়ে জানে  কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আর হবিগঞ্জের মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের সময় সে ছিলো ইসলামী ছাত্র সংঘের কলেজ শাখার সভাপতি। একই সঙ্গে কিশোরগঞ্জ জেলার আলবদর বাহিনীর কমান্ডার। 

.

এই রজব আলীর নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধের সময়  ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার মানুষকে নৃশংস কায়দায় হ''ত্যা করেছিলো আলবদর ও রাজাকারেরা। হবিগঞ্জের লাখাইয়ের কৃষ্ণপুর, চণ্ডীপুর, গদাইনগর, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের সাবিয়ানগর, সদানগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাসিরনগরের ফান্দাউক গ্রামের গণহ'ত্যা সব অসংখ্য  গণহ'ত্যার কারিগর ছিলো এই নরকের কীট।  কতো নারীকে যে ধ''র্ষ'ণ করেছে তার হিসেব নেই। মুক্তিযুদ্ধে  তার এক সহকারীই ধ''র্ষ'ণ করেছে শতাধিক নারীকে। 

.

মুক্তিযুদ্ধের সময় সাধারণ মানুষকে ধরে এনে রাজাকার ক্যাম্পে টর্চার করে আদায় করতো মোটা অংকের মুক্তিপণ। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারাই বলেছিলো গোটা মুক্তিযুদ্ধে রজব আলী মুক্তিপণের টাকা বাবদ নিজের পকেটে ঢুকিয়েছিলো  তৎকালীন সময়েই প্রায় ২ কোটি টাকা। কেউ যদি মুক্তিপণ দিতে না পারতো তবে তাকে নিজ হাতে জ'বাই করতো  আমিনুল হক। আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে লুটপাটের হিসেব তো বাদই দিলাম। 

.

 এই রজব আলী কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পরেও আজো অব্দি কখনোই বাংলাদেশের অস্তিত্ব স্বীকার করেনি। ও এতোটাই পৈশাচিক ও নির্দয় ছিলো যে কোন অনুশোচনাও আসেনি তার মধ্যে। প্রকাশ্যেই বলে বেড়াতো  আমি আলবদর কমান্ডার। তার লেখা ‘আমি আলবদর বলছি’ বইটিতে সে মুক্তিযোদ্ধাদের বলেছে 'দেশদ্রোহী'আর পাকিস্তানি হানাদার সেনাদের বলেছে দেশের বীর সৈনিক । বঙ্গবন্ধু কেন স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন তাই সে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়েই লিখেছে ‘দুই পলাশী দুই মীরজাফর।’ 

.

১৯৭২ সালে এই নরকের কীটের বিচারে ৪০ বছরের হাজার রায় হয়েছিলো। কিন্তু ১৯৮১ সাল রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে বিশেষ ক্ষমায় তাকে মুক্তি দিয়েছিলেন। মুক্তি পাওয়ার পর তার প্রভাব আগের চেয়ে বেড়েছে। 

মুক্তিযুদ্ধের পরেও মুক্তিযুদ্ধের সময়কার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অফিসারদের ভুলেনি সেই। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সেইসব অফিসারদের সঙ্গে দেখা করতে বহুবার পাকিস্তানেও বেড়াতে গিয়েছিলো রজব আলী।   ১৯৯৭ সালে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় চলে এসে কুখ্যাত আমিনুল হক। 

.

২০১৪ সালে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হলে আত্মগোপনে চলে যায় এই আমিনুল হক।  গ্রেফতার এড়াতে বিভিন্ন ছদ্মনামে পরিচয় দিতো। ধরা পড়তে পারে বলে কোন সামাজিক অনুষ্ঠানেও যেতোনা। নাম পরিবর্তন করেছিল বেশ কয়েকবার। ২০১৮ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে বিচারের রায়ে মৃ'ত্যুদণ্ডের সাজা দিয়েছিলো আদালত। এরপর সে পুরোই লাপাত্তা। 

অবশেষে প্রশাসন তাকে গ্রেফতার করতে পেরেছে। 

ডেস্ক রিপোর্ট 


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন