কবি আল মাহমুদ সম্পর্কে এ প্রজন্ম কতটুকু জানে?

কবি আল মাহমুদ সম্পর্কে এ প্রজন্ম কতটুকু জানে?


-রেডিও শহর ডেস্ক
 

মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ

১৯৩৬  সালের  ১১ জুলাই জন্ম নিয়েছিলেন। আল মাহমুদ নামে অধিক পরিচিত। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প লেখক, শিশুসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক ছিলেন।

তার বাবার  নাম মীর আবদুর রব।মা  রওশন আরা মীর।তার দাদার নাম আব্দুল ওহাব মোল্লা যিনি হবিগঞ্জ জেলায় জমিদার ছিলেন।


তিনি কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার সাধনা হাই স্কুল এবং পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হাই স্কুলে পড়ালেখা করেন।

মধ্যযুগীয় প্রণয়োপাখ্যান, বৈষ্ণব পদাবলি, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল প্রমুখের সাহিত্য পাঠের পর কাব্য সাধনা শুরু করেন ।


 ১৯৬৩তে প্রথম কাব্যগ্রন্থ "লোকলোকান্তর" প্রকাশের পর ১৯৬৬তে "কালের কলস" প্রকাশিত হয়।  


"সোনালী কাবিন" প্রকাশের পর তিনি জনপ্রিয় হন। তাঁর কবিতার ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ সৃষ্টি হলো। 

১৯৬৮ তে আল মাহমুদ মাত্র বত্রিশ বৎসর বয়সে বাঙলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। 


১৯৮৭ এ পশ্চিমবঙ্গের কবি শক্তি চট্টেপাধ্যায় তার সম্পর্কে বলেন, 'আমি নানা কারণে আল মাহমুদের সোনালী কাবিনটা খুব বিশিষ্ট বই বলে মনে করি। বাংলাদেশে এরকম সনেট আর লেখা হয় নি। পশ্চিমবঙ্গে হয়েছে।’ —


 প্রথম কাব্যগ্রন্থ লোক লোকান্তরের ‘অরণ্যে ক্লান্তির দিন’, ‘তিতাস’, ‘এমন তৃপ্তির’, ‘নৌকোয়’ ইত্যাদি কবিতায় গ্রামীণ ঐতিহ্যলগ্নতার যে-আভাস ঝলকে উঠেছিল, তা দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ কালের কলস এবং বিশেষ করে তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ সোনালি কাবিনে এসে চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে

১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ, কবি আগরতলা হয়ে কলকাতায় গিয়েছিলেন- কোলকাতা ঘুরতে ।দেশে ফিরে ১৯৭২ এ দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসাবে কাজ শুরু করেন। এরপর থেকে তাঁর কবিতায় এই বৈশিষ্ট্য ম্লান হয়ে পড়ে- আলাদা হয়ে যায়।


জসীমউদ্দীনের মতো লোকায়ত জীবনের রূপকার নন তিনি। জীবনানন্দ হয়ে ওঠা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি বরং সুযোগ পেলে তাঁকে ছোটো করতে চাইতেন - 


"জীবনানন্দ দাশ এটা বন্ধুদের ভয়ে বের করেননি। পাছে তাঁকে কেউ জসীমউদ্দিন বলে — এই ভয়ে জীবনানন্দ দাশ "রূপসী বাংলার" মতো অমর কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেননি। 

'খাটের নিচে'  লুকিয়ে রেখেছিলেন।"


কবির ছিলো রাজনৈতিক পক্ষপাত, ধর্মবিশ্বাস আর এ্যাগনস্টিক দোদুল্যমানতা। জাতিগত বিদ্বেষও


"পৃথিবীর সবকটা সাদা কবুতর/ 

ইহুদী মেয়েরা রেঁধে পাঠিয়েছে/

মার্কিন জাহাজে"


তিনটি লাইনেই ঘৃণার প্রতীক। ইহুদী মানেই খারাপ-  মেয়ে  খারাপ। মার্কিন মানেই খারাপ। 

বাংলাদেশের প্রগিতিশীল উদার অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষের জন্যে লেখা--

‘যারা প্রগতির কথা বলে

তাদের মুখের ভিতর

ঢুকিয়ে দাও বাঙলাদেশের নিশাণ ।’


 একজন কবি-   লেখেন, বখতিয়ারের ঘোড়া এসে দেশ থেকে একটি ধর্মের লোক ছাড়া অন্যদেরকে কত*ল করে দেবে। 


আশির দশকের শুরুতে “জিজ্ঞাসা“ পত্রিকায় আল মাহমুদের কবিতা প্রকাশ করতে গিয়ে শিব নারায়ণ রায় লেখেন- 

"কবির কার্যকলাপ দিয়ে কবিতার মূল্যায়ন মেনে নিতে পারিনি আমি। তাই কয়েক সংখ্যা পর আল মাহমুদের আরও একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশ করি। আর সম্পাদকীয় মন্তব্যে এ কথা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিই— আল মাহমুদের কবিতা উপভোগ এবং তাঁর বিশ্বাস বা কার্যকলাপকে সমর্থন করা সমার্থক নয়।"


মানুষের জীবনে ধর্ম পালন করাতো আনন্দের বিষয়।ধর্মের নৈতিকতা কবিতার বিষয় হয়ে পাঠকের মনে শান্তির প্রতীক হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু


কবিতার বিষয় যখন বিশেষ কারণে সীমাবদ্ধ হয়ে যায়,তখন তা আর সর্বমান্য হয় না।


ডেস্ক রিপোর্ট 

সৌজন্যে বাদুস পরিবার 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন