-রেডিও শহর ডেস্ক
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রথম ইউনিট—কিলো ফ্লাইট এ ব্যবহৃত অ্যালুয়েট৩ হেলিকপ্টার
এটি ছিল ফ্রান্সের তৈরি, ছোট আকৃতির এই হেলিকপ্টার ভারত একটি ৩০৩ ব্রাউনিং মেশিনগান, ১৪টি রকেটসহ দুটি রকেট নিক্ষেপক সংযুক্ত করে হেলিকপ্টারটিকে যুদ্ধাজাহাজে পরিণত করা হয়েছিল।
অব্যবহৃত এয়ারফিল্ড, পরিত্যক্ত রানওয়ে, জঙ্গলে ঘেরা বৈরি পরিবেশ! আর তারই মধ্যে অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে চলেছে প্রশিক্ষণ, অঙ্কুরোদগম হয়েছে এক সশস্ত্র বাহিনীর। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর গোড়াপত্তনের এবং অদম্য সাহস ও সাহসিকতার। কঠিন প্রশিক্ষণের পর ঝুঁকি নিয়ে উড়াল দেয়ার গল্প, সাহসিকতার সাথে বিপদমুখে ঝাঁপিয়ে পড়ার উপাখ্যান আর বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সূচনালগ্ন কেন্দ্রীভূত একটি বিন্দুতে- ইউনিট কিলো ফ্লাইট।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করতে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর অনেক বাঙালি অফিসার, ক্যাডেট ও সেনা পালিয়ে চলে আসেন। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত তারা নানা স্থল অপারেশনে অংশগ্রহণ করে বীরত্বের পরিচয় দেন।
বিমানসেনা ও বিমানবাহিনীর অফিসার পালিয়ে এসে মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ এ ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরের পরিত্যক্ত বিমানঘাঁটিতে অত্যন্ত গোপনভাবে গোড়াপত্তন হয় ক্ষুদ্র বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর, গোপনীয়তা রক্ষার্থে যার নাম দেয়া হয়েছিল ‘কিলো ফ্লাইট’।
স্বাধীন বিমানবাহিনী গঠনের জন্য তৎকালীন অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারকে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে পুরনো দুটি বিমান ও একটি হেলিকপ্টার দেয়া হয়। এর মধ্যে একটি বিমান ছিল যোধপুরের মহারাজার দেয়া আমেরিকায় প্রস্তুতকৃত ডিসি-৩ ডাকোটা এবং অন্যটি কানাডায় তৈরি ডিএইচথ্রি অটার বিমান। হেলিকপ্টারটি ছিল ফ্রান্সে তৈরি এলুয়েট থ্রি মডেলের। সদ্যজাত এই বিমানবাহিনীর লক্ষ্য ছিল মূলত এই আকাশযানগুলো নিয়ে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর রাত্রে আক্রমণ করার অপারগতাকে কাজে লাগিয়ে আকাশপথে আচমকা হামলা চালিয়ে পালিয়ে আসা। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের ক্ষয়ক্ষতি সাধন করাও ছিলো এর উদ্দেশ্য।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন উপপ্রধান গ্রুপ ক্যাপ্টেন বীর উত্তম এ. কে. খন্দকার বিমানবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন (তার নামের অক্ষর ‘কে’ থেকেই কিলো ফ্লাইটের নামকরণ করা হয়েছে)। বিভিন্ন সেক্টর থেকে ৫৮ জন বিমানসেনাকে কিলো ফ্লাইটের জন্য নিয়ে আসা হয়। এদের মধ্যে কিছু পিআইএ এবং প্ল্যান্ট প্রোটেকশন পাইলটও ছিলেন। কিলো ফ্লাইট দলে ছিলেন ১০-১২ জন পাইলট (যাদের ৩ জন পাকিস্তান বিমানবাহিনী থেকে এবং ৬ জন পিআইএ-সহ অন্যস্থান থেকে পালিয়ে এসেছিলেন) ও কিছু টেকনিশিয়ান। পালিয়ে আসা ৯ জন পাইলট হলেন- স্কোয়াড্রন লিডার (পরবর্তীতে এয়ার ভাইস মার্শাল ও চিফ অফ এয়ার স্টাফ) সুলতান মাহমুদ, ক্যাপ্টেন শাহাবুদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ, ক্যাপ্টেন আলমগীর সাত্তার, ক্যাপ্টেন খালেক, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মোহাম্মাদ শামসুল আলম, ক্যাপ্টেন মুকিত, ক্যাপ্টেন বদরুল আলম এবং ক্যাপ্টেন শরফুদ্দিন। বিমান ও হেলিকপ্টারের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র যেমন- মেশিনগান, রকেট, পড এবং জ্বালানী ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হয়েছিল।
তথ্য সূত্রঃ সংগ্রামের নোটবুক
ডেস্ক রিপোর্ট
Post a Comment