লেখাটি পড়ার পর চোখের জ্বল আর ধরে রাখতে পারবেননা

লেখাটি পড়ার পর চোখের জ্বল আর ধরে রাখতে পারবেননা





-রেডিও শহর ডেস্ক 

আমার একটা বাড়ি ছিল পদ্মা নদীর তীরে

সাত পুরুষের জনম গেছে খরকুটার এই নীড়ে


একটুখানি উঠোনে ছিল ছোট্ট ক টা ঘর

পাশেই ছিলো বাবা-মায়ের পুরনো কবর।


দক্ষিনে এক পুকুর ছিল কানায় কানায় জল

দখিন হাওয়ার ঢেউ গুলো তার করত টলমল।


হালের দুটো বলদ ছিল একটা দুধের গাই

ওরা যেন ছিল আমার ভাগ্নি এবং ভাই।


ঘরের মুখে ছিল দুটো লাল গোলাপের চারা

সারা বাড়ি থাকতো ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা 


লাল পুঁইয়ের এক মাচা ছিল আঙ্গিনার এক পাশে

পুঁইয়ের ডগা দুলত সেথায় দক্ষিণা বাতাসে।


তাজমহলের রূপ ছিল মোর সবুজ-শ্যামল নীড়ে

আসতে যেতে পথের পথিক চাইত ফিরে ফিরে।


এই বাড়িতে তেমন সুখেই যাচ্ছিল দিন কেটে

যেমন সুখে শিশুরা সব ঘুমায় মায়ের পেটে।


আমার এ সুখ সইল না ঐ পদ্মা নদীর প্রাণে

 বান ডেকে সে ঢেউ তুলে মোর বক্ষে আঘাত হানে।


ঘরবাড়ি সব ভাসিয়ে নিল ভাসালো দুই আঁখি 

অশ্রু ছাড়া কিছুই সে মোর রাখল না আর বাকি।


কাল যেখানে ছিল আমার মাথা গোঁজার ঠাঁই 

আজ সেখানে জলের খেলা আমার কিছুই নাই।


বাপ মা আমার ঘুমিয়ে ছিল কাল যে মাটির ঘরে

আজ সেখানে নদীর পানি রঙ্গে খেলা করে।


সাত পুরুষের স্মৃতির মতন নাই কো কিছুই আর

নদীর জলে ভাসছে তাদের গোর কবরের হাড়।


নদীর জলে হাড় পেলে কেউ বক্ষে তুলে নিও

গোর হারা মোর মায়েরে আবার দাফন করে দিও।


কাল যেখানে থাকত বাঁধা আমার বলদ গাভী

 আজ সেখানে বানের জলে ভাসছে হাবিজাবি।


তদের সাথে যদিও আমার রক্ত বাঁধন নাই

 তবুও ওরা ছিল আমার ভগ্নী এবং ভাই।


আমার সুখে হাসত ওরা কাঁদত আমার দুখে 

নিজের বাছুর উপুস রেখে দুধ দিতে মোর মুখে।


হাসিমুখে আমার সাথে টানত ওরা হাল

ভাইয়ের মতোই সঙ্গ দিয়ে আসছে চিরকাল।


আমার এ সুখ হয়নি হজম পদ্মা নদীর চোখে

আঘাত করে আমাদের এই ভাই বাঁধনের বুকে।


হঠাৎ দেখি তার আঘাতে উঠোন গেছে ফেটে

প্রাণ বাঁচাতে দিলাম ওদের গলার দড়ি কেটে।


নদীর জলে ভাসিয়ে দিয়ে সাত জনমের বাঁধন

অবাক চেয়ে শুনছি তাদের হাম্বা সুরের বাঁধন।


বিদায় কাঁদন কান্ধে ওরা আমার দিকে চাহি

আমিও কাঁদি কান্না ছাড়া কিচ্ছু করার নাহি।


জানিনা আজ কোথায় ওরা মরল না কি আছে

কোথায় পাব তাদের খবর সুধাই বা কার কাছে।


নদির জলে পাও যদি কেউ তিনটি বলদ গাই

বুঝে নিয়ো এরাই আমার হারানো বোন ভাই।


বিনয় করে বলছি তোমার পা জড়িয়ে ধরে

একটু তাদের থাকতে দিও তোমার গোয়াল ঘরে।


শিরোনাম:- নদীর পাড়ের বাড়ি।

কলমে :- ফেরদৌস আহমেদ।


Post a Comment

Previous Post Next Post