বরিশালের এই মেয়েটিই ছিলো সমগ্র উপমহাদেশের প্রথম মহিলা ডাক্তার //গর্বিত ইতিহাস জানুন

বরিশালের এই মেয়েটিই ছিলো সমগ্র উপমহাদেশের প্রথম মহিলা ডাক্তার //গর্বিত ইতিহাস জানুন


-রেডিও শহর ডেস্ক
 

উপমহাদেশের অন্যতম প্রথম মহিলা চিকিৎসক-

 বরিশালের ' বিনি' 


 বরিশালের  চাঁদশী  গ্রামের  ব্রজকিশোর  বসু। তাঁর কন্যা বিনি। ব্রজ কিশোর ছিলেন স্কুল  শিক্ষক।সেই সূত্রেই একসময়  চলে যান বিহারে।লেখা পড়ার মনোযোগী বিনি,কিন্তু মায়ের  ইচ্ছে  ছিল  না,  মেয়ে  উচ্চ শিক্ষিত  হোক! 


এ হচ্ছে  সেই  সময়,যখন  ভাবা হতো —

মেয়েরা  লেখা  পড়া  শিখলে  'বিধবা  হবে'! 

বাবার  অদম্য  ইচ্ছার  জোরে  আর  পিসতুতো দাদার তত্ত্বাবধানে ।বিনির  বিদ্যারম্ভের  সূত্রপাত৷


১৮৭৮সালে  কোলকাতা  বিশ্ববিদ্যালয়  থেকে  এই   তরুণী  প্রবেশিকা  পরীক্ষায়  ২য়  শ্রেনিতে  উর্তীর্ণ  হন৷ঐ  সময়  বেথুন  কলেজে  প্রথম  "এফ,এ"   এবং  স্নাতক  শ্রেনিতে  পাঠদান  শুরু  হয়৷ বিনি  এবং  চন্দ্রমুখী  বসু    বেথুনের  প্রথম  মহিলা  গ্রাজুয়েট!


এরপর  বিনির  কাদম্বিনী  হয়ে  ওঠার  এক  অবিশ্বাস্য  ইতিহাসের  পদযাত্রা।ডাঃ  পড়ার  শুরু ১৮৮৩ সালে৷  সহসহপাঠিনী ছিলেন রবীন্দ্রনাথের  ভাইঝি  সরলা  দাস । তিনি প্রথম  দিকেই  যাত্রা পথের  ইতি  টানেন, এগিয়ে যান বিনি।


বিনি   এক রোঁখা...সকল  আঁধারের  বাঁধন  ছিঁড়ে  জ্বালতে  হবে  আলো৷

  গুরু  সম  দ্বারকানাথ-সমাজ  সংষ্কারক-মানব দরদী৷ মেয়েরা লেখা পড়া শিখুক তাঁর  মনোগত পণ৷তিনি  বিপত্নীক এবং কয়েকটি  সন্তানের  জনক৷   পরিবারের  ইচ্ছে  না  থাকলেও   ২১বছরের বিনি   তাঁকেই   বিবাহ  করেন- ভালোবেসে৷এই  মানুষটি  পাশে  না  থাকলে  যে  মেয়ে  হয়েই  থাকতে  হবে-'মানুষ'  হওয়া  হবেনা!


পড়া আর  সংসার৷  সন্তান  আর  সম্মান-কঠিন  পরীক্ষা৷  সতীশ  নামের  যে  সন্তান ,তার   পোলিও..৷অধীত  বিদ্যা প্রয়োগের  সাথে সাথে  নিয়মিত  মাথা  ধুইয়ে  একদিন  তাকে  সুস্থ করে  তোলেন৷সেই  সময়ের  বিখ্যাত  ডাঃ  মহেন্দ্রলাল  সরাকার  সব  জেনে  প্রশংসায়  উৎসাহ  দেন  নবীন  চিকিৎসককে৷  মেডিকেল  কলেজের  শিক্ষকেরা  ছিলেন  তাঁর  বিরুদ্ধে৷কোনো  মতেই  চাননি  একজন  বাঙালি  তরুণী  চিকিৎসক  হয়ে  উঠুক!


একদিন  মেডিকেল  কলেজের  ফাইনাল  পরীক্ষা  এসে যায়  ৷লিখিত  পরীক্ষায়  তাঁকে  আটকাতে      না পেরে  মৌখিক  পরীক্ষায়  ফেল  করিয়ে দেন ইচ্ছাকৃত  ভাবে৷ যাঁদের মধ্যে  অগ্রনী  ভূমিকা  রেখেছিলেন  ডাঃ  রাজেন্দ্রচন্দ্র  এবং অন্যান্য প্রফেসর৷


যাঁর  মাথায়  সরস্বতীর হাত,তাঁকে  আটকাবে কে!  বিনি  ১৮৮৬  সালে  জিবিএমসি  ডিগ্রী  পান৷ মেডিকেল  কলেজে  পড়ার সময়  স্কলারসিপ  ছিল  ২০টাকা৷  বিলেত  যাবার  আগে   লেডি  ডাফরিন  হাসপাতালে  ৩০০টাকা  বেতনে  চাকরি শুরু!


পথ  ছিলনা কোনোদিক  থেকেই  পুস্পশোভিত৷১৮৯১ সালে  'বঙ্গবাসী'  পত্রিকায়  তাঁকে  'চরিত্রহীন'বলা হয়৷  মানহানির মামলা করলেন  এবং  জয়লাভও৷সম্পাদক  মহেশ  পালের  ছয়মাস  কারাদন্ড  এবং  ১০০ টাকা জরিমানা হয়  আদালতের  বিচারে!


১৮৯৫সালে  নেপালের  রাজমাতার চিকিৎসা  করতে  যান বিনি, তখন তিনি "dr কাদম্বিনী  গাঙ্গুলি।   শোনা যায়   রাজমাতা  সুস্থ  হয়ে  উঠলে  তাঁকে  উপঢৌকণ  দিতে চেয়েছিলেন  সোনা  রূপো...! নির্লোভ  ডাঃ  কিন্তু  কোনো  লোভের  কাছে  কোনোদিন  মাথা  নোয়ান নি৷


কোলকাতার  কোনো  বাড়িতে  ডাঃ  হিসাবে  গেলে  বাড়ির  ভিতর  থেকে  আওয়াজ  আসত  "ডাঃ  কোথায়! এতো  মেয়ে.."! নেপাল  থেকে  ফিরবার  পরে  এশিয়ার  চিকিৎসক  মহলে  এই  বাঙালি   তরুণী  চিকিৎসকের   নাম  এবং  ডাক  ছড়িয়ে  যায়৷ ইংরেজদের  কাছে  মর্যাদা ছিনিয়ে  নিয়েছিলেন  নিজের  যোগ্যতায়!


 কাদম্বিনী ছিলেন কংগ্রেসের প্রথম মহিলা বক্তা। হেনরি পোলক প্রতিষ্ঠিত ট্রানসভাল' ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম সভাপতি এবং ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় অনুষ্ঠিত মহিলা সম্মেলনের সদস্য৷  


বরিশালের কবি কামিনী রায়ের(১২ অক্টোবর ১৮৬৪

বাসণ্ডা, বাকেরগঞ্জ,বর্তমানে ঝালকাঠি )সাথে কাদম্বিনী দেবী ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে বিহার এবং ওড়িশার নারীশ্রমিকদের অবস্থা তদন্তের জন্য সরকার দ্বারা নিযুক্ত হয়েছিলেন।


ঘর-সংসারের  ফাঁকে  বসতেন  সূঁচ-সুতো নিয়ে!অসাধারণ  দক্ষতা ছিল   সূঁচী শিল্পে! এযে  তাঁর  শখের  কাজ!


১৯২৩সাল- অপারেশন শেষ করে  ফিরছিলেন  বাড়ি..৷হার্ট এট্যাকে মৃত্যু  হয়  এই ক্ষণজন্মার৷দীর্ঘ জীবন  পেলে  মানুষের  জন্যে আরো কত কিছু করার  ছিল  তাঁর৷কালজয়ী  কাদম্বিনী,যাঁকে  ডেভিড  কফ  বলেছিলেন  "তৎকালীণ  সময়ের   সেরা  রমনী"! 


আধুনিক নারীর  প্রতিবিম্ব  'বিনি'র-জন্মদিন আজ। 

১৮ই জুলাই ,১৮৬১সাল৷

১৬০ তম জন্মবর্ষে গুগোল অভিনব ভাবে তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছিলো। গুগলের  ডুডোলে কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছে "এশিয়ার প্রথম প্রতিষ্ঠান মেডিকেল কলেজ কলকাতা।" কলকাতার তৎকালীন   চিকিৎসা শিক্ষা   এবং  আমাদের ঘরের 'বিনি'কতখানি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল তা এই থেকেই বোঝা যায়!


রবীন্দ্রনাথের সম সাময়িক জন্ম হয়েছিল বরিশালের 'বিনি' ডাক  নামের  এক শিশু কন্যার৷   পরবর্তীতে এশিয়ার মহাদেশের প্রথম দিকের মহিলা চিকিৎসকদের একজন-  "কাদম্বিনী  গাঙ্গুলী"  নামে যিনি পরিচিত ৷যদিও সাধারণ  বাঙালির কাছে  তিনি  অপরিচিতই বলা চলে৷

যদিও  আমরা আর  আমাদের  সন্তানেরা  এদের  না চিনেই  জীবন  কাটিয়ে  দিলাম  তাঁদের অবদান  ভুলে  গিয়ে৷


তথ্য এবং  ছবি—ইন্টারনেট৷

কালজয়ী  কাদম্বিনীঃ ডাঃ  সুনীতা  বন্ধোপাধ্যায়৷


অবলা বান্ধব

দ্বারকানাথ  ও কাদম্বিনীঃনারায়ণ  দত্ত


সৌজন্যে বাদুস পরিবার 


ডেস্ক রিপোর্ট

Post a Comment

أحدث أقدم