-রেডিও শহর ডেস্ক
প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং একটি গল্প....
কথা গুলো ১৯৮৮ সালের বন্যা কেন্দ্রিক....
আমাদের যৌথ পরিবার ছিলো এবং সকলে একত্রেই বসবাস করতেন// বন্যার কয়েকদিন আগ থেকেই আবহাওয়া অফিসের সতর্কীকরণ মেসেজ! নিয়মিত দাদু রেডিওতে শুনতেন এবং দাদি সহ চাচা ফুপি এবং পাড়া প্রতিবেশীদের সচেতন করতেন বন্যা হতে নিরাপদ দূরত্বে থাকার জন্য৷
বন্যার ঠিক চার বা পাচদিন আগের কথা!
বাবা তার এক বন্ধুর বিয়েতে কামরাঙ্গীরচর যাবেন এবং যাওয়ার সময় বাবা? দাদা এবং দাদিকে বলেছিলেন! সপ্তাহ খানেক থেকে ফিরে আসবেন! কামরাঙ্গীরচর যাওয়ার সময় দাদা বাবাকে বললেন! আবহাওয়া খুব একটা ভালোনা ঝড় বন্যা হতে পারে! তাছাড়া কামরাঙ্গী হলো চর এলাকা এবং নদীর পাশে অবস্থিত, যাবে যাও তবে সাবধানে থেকো, বাবা দাদার কথা শুনে ঠিক আছে বলে বিদায় নিলেন এবং বাবার জন্য রাস্তায় অপেক্ষারত বন্ধুদের নিয়ে বাবা! রওনা হলেন কামরাঙ্গীরচরের উদ্দেশ্যে।
এবং কয়েক ঘন্টার জার্নি শেষে বাবা ও তার বন্ধুরা এক সময় কামরাঙ্গীরচর পৌছে রিকশাযোগে চলে যান বন্ধুর বিয়েতে, বাবা এবং তার বন্ধুরা সেখানে পৌছনোর পরদিনই বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন করা হয় এবং বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন হওয়ার পর! বাবা এবং তার বাকি বন্ধুরা খুব ফুরফুরে মেজাজেই বেড়াতে থাকেন বিয়ে বাড়িতে,
কিন্তু তখনও বাবা সহ তার বন্ধুরা জানতোনা যে! নিকোশ কালো আধারে ঘাপটি মেরে বসে আছে এক জ্বল দানব - যে দানব কিনা ঘুমন্ত নগরীকে আক্রান্ত করার প্লানে ধ্যান মগ্ন....
//বন্যারদিন এবং রাত//
বাবা এবং তার বন্ধুরা সদ্য বিবাহিত বন্ধু ও বন্ধুর বউ এর সাথে সারাদিন খোশ গপ্পে মেতে! বিকেলে বের হয়েছিলো কামরাঙ্গীচর এলাকাটি একটু দেখার জন্য! এবং যখন তারা বাসা থেকে বেরিয়ে ছিলেন! তখন নাকি আবহাওয়ার অবস্থা বেশ ভালোই দেখা যাচ্ছিলো এরপর ঘোরাঘুরি শেষ করে সকলেই বাড়ি ফিরে আসে এবং বাড়িতে এসে সবাই রাতের খাবার খেয়ে বাহিরে যায় সিগারেট খেতে// বাবা সিগারেট খেয়ে তার বন্ধুদের বলেন? তোরা কি এখন ঘুমোবি? উত্তরে বাবার বন্ধুরা বলেন? না তুই যেয়ে ঘুমা আমরা একটু অন্য রুমে খানিকটা সময় তাস খেলবো, তুই দরজা লাগিয়েই ঘুমা আমাদের দেড়ি হলে ঐ রুমেই আমরা ঘুমিয়ে পড়বো এ কথা শুনে বাবা ঠিক আছে বলে রুমে গিয়ে জামা কাপড় ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়েন।
ঘন্টা দুয়েকের মত ঘুমনোর পর আচমকা কি না কি স্বপ্ন দেখে? বাবার ঘুম ভেংয়ে যায়? এবং বাবা ধরফর করে শোয়া থেকে উঠে বসেন এবং মিনিট খানেক বসে থেকে? বিছানা থেকে নেমে গুটি গুটি পায়ে জানালার কাছে এসে দাড়ায়? এরপর কাঠ মাস্তুল জানালাটি চড়চড় করে খুলে ফেলেন? ুএবং নিকোশ কালো মেঘে ডাকা আকাশটা দেখতে দেখতে ভাবেন? আকাশের অবস্থা খুবই খারাপ দেখছি সম্ভবত ভারি বৃষ্টি হতে পারে? চারপাশ সুনশান হয়তো বন্ধুরাও ঘুমিয়ে পড়েছে পাাশের ঘরে, বন্ধুর বাড়ির যা অবস্থা ভারি বৃস্টির সাথে ঝড় বাতাস শুরু হলে? চড়চড়ে টিনের ঘর টিকবে তো?
এসব ভাবতে ভাবতে বাবার? দু চোখের পাতা জুড়িয়ে আসে এবং বাবা জানালাটা বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় যেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।
ফের যখন বাবার ঘুম ভাংয়ে তখন বাবা অনুভব করেন
খুব সজোরে যেন কিছু একটা তার উপড়ে পড়লো এবং তিনি নিশ্বাস নিতে পারছেন না? মনে হচ্ছে তিনি পানির ভেতরে আছেন, এরপর কোনো মতে শ্বাস ধরে রেখে বাবা,তার বুকে পড়া বস্তুটিক সরিয়ে বের হবার রাস্তা খুজতে থাকেন, কোনো ভাবেই তিনি বের হবার রাস্তা খুজে পাচ্ছিলেন না - এদিকে বাবার নিশ্বাসও প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম বাবা দিক বেদিক হয়ে বের হবার জন্য চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে!
খানিকবাদেই বাবার জানালার কথা মনে পড়লো এবার
বাবা জানালার ওদিকে যেয়ে জানালা খুলে বের সক্ষম হন - এবং বাবা দেখতে পায়? চারিদিকে ঘৈ থৈ করছে অজস্র পানি, মনে হচ্ছ? বুড়িগঙ্গা হেটে এসে ঘুমন্ত নগরীর মানুষ গুলোকে চির নিদ্রায় নিদ্রাচ্ছন্ন করে দিয়ে গেলো - ঘর বাড়ি জনমানব কিছুই যেন উদিত নেই! সব যেন গিলে নিয়েছে বুড়িগঙ্গা।
বাবা পানির মধ্যে ভেসে এসব যখন ভাবছিলেন? ঠিক তখনই একটি নারী কন্ঠ বলে উঠলেন? কে ওখামে আমাকে একটু ধরেন আমি এই ড্রামটা ধরে ভেসে আছি! বাবা এমন কথা শুনে দ্রুত সেই নারী কন্ঠের দিকে অন্ধকারে সাতড়ে যেয়ে দেখলেন? এ তো সেই মতুন বউ? আমার বন্ধুর বউ? বাবা তার বন্ধুর বউকে বললেন? ভাবি ওরা কোথায়? উত্তরে সেই নতুন বউ বললো? আমি জানিনা ভাই আমাকে ধরুন।
আমার নাম প্রান্ত নীল এতক্ষণ যে গল্পটি সকলে পড়লেন সেই গল্পের বেচে থাকা শেষ দুজন মানুষই আমার বাবা মা -এবং সেই বিভীষিকাময় ১৯৮৮ বন্যার রাতে আমার মায়ের পূর্বের স্বামী সহ তার পরিবার এবং বিয়েতে যাওয়া বাবার অন্য বন্ধুদের ভেতর কেউই আর বেচে ছিলেন না।
ছোট গল্প
গল্প হলেও সত্য
কারন ১৯৮৮ বন্যাতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ প্রান হারিয়েছিলো বুড়িগঙ্গার কাছাকাছি অবস্থিত । কমরাঙ্গীর চর এলাকায় এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই সর্বনাশা ১৯৮৮ বন্যার পানি হামলে পড়েছিলো ঘুমন্ত মানুষ গুলোর উপড়ে এবং দুধের শিশু থেকে শুরু করে অনেেক বয়োবৃদ্ধ প্রান হারিয়েছিলেন।
গল্প লেখাঃ Gwa
লেখাঃ
إرسال تعليق